কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় ভূমি অধিগ্রহণের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নকল খতিয়ান তৈরি, আদালতের রায় অমান্য ও প্রকৃত মালিকদের হয়রানির এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। একটি প্রভাবশালী মহল সরকারি অধিগ্রহণে বরাদ্দ কোটি কোটি টাকার চেক ভুয়া তথ্য দিয়ে তুলছে। অথচ প্রকৃত মালিকরা আদালতের রায়ে বৈধ স্বত্বাধিকারী প্রমাণিত হয়েও আজ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।
জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার অমাবশ্যাখালী মৌজার আরএস খতিয়ানভুক্ত জমি বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করা হয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনে। এ জমির প্রকৃত মালিকরা কক্সবাজারের সহকারী জজ আদালতে দায়ের করা মামলা নং ৭১/২০১৯-এ রায় পান, যেখানে স্পষ্ট বলা হয় যে বিএস খতিয়ান নং ৪৮ একটি ভিত্তিহীন ও ফেরাবি খতিয়ান, এবং আরএস খতিয়ানভুক্ত ব্যক্তিরাই প্রকৃত মালিক।
অথচ ভূমি অধিগ্রহণ শাখা এই আদালতের রায় উপেক্ষা করে ভুয়া বিএস খতিয়ানধারী কয়েকজনের নামে চেক ইস্যু করে দিয়েছে। এতে সহায়তা করেন সাবেক এলএ অফিসার বিমল চাকমা ও বর্তমান এলএ শাখার কর্মরত সার্ভেয়ার শিশির চাকমা। অভিযোগ রয়েছে, চেক পাওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী—
“আমরা আদালতের রায়ে স্বত্ব প্রাপ্ত হয়েও চেক পাচ্ছি না। উল্টো হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে আমরা মুখ বন্ধ রাখি। একাধিকবার দুদক ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাইনি।”
বর্তমানে এ ঘটনায় অন্তত ১২টি মামলা কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে চলমান রয়েছে। জমির প্রকৃত মালিকদের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ভূমি অফিসে গেলে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়।
ভুক্তভোগীদের দাবিগুলো হলো—
১. আদালতের রায় অনুযায়ী প্রকৃত জমির মালিকদের অধিগ্রহণের টাকা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
২. ভুয়া খতিয়ানধারী ও ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. চেক প্রদানের আগে মালিকানা যাচাই বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪. ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ভূমি অধিগ্রহণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এমন দুর্নীতি ও আদালতের রায় অমান্যকারী কর্মকাণ্ডে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে প্রকৃত তথ্য গোপন করে চেক বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে দুদক কক্সবাজারে একটি লিখিত অভিযোগও জমা দেওয়া হয়েছে।
সচেতন মহলের আশঙ্কা, এভাবে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও ভূমি দখলের অনিয়ম বন্ধ না হলে, আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হবে। দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।