মশি উদ দৌলা রুবেল ফেনী:
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আত্মস্বীকৃত এক মাদক কারবারি কে নিয়ে সংবাদ করায় ফেনীর একাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার ২৩ এপ্রিল ফুলগাজীর আমলী আদালতের বিচারক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুজ জোহরার আদালতে এই মামলা করেন ইউপি সদস্য রহিম উল্ল্যাহ। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ফেনী জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাকা পোস্টের ফেনী জেলা প্রতিনিধি তারেক চৌধুরীকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।এতে আসামি হিসেবে দৈনিক ফেনী পত্রিকার সম্পাদকের নাম উল্লেখ করা হলেও মামলার এজাহারে আরিফুল আমিন রিজভীর স্থলে লেখা হয় আরিফুর রহমান। এছাড়া দৈনিক ফেনীর রিপোর্টার হিসেবে মামুনুর রহমান,ঢাকা পোস্টের রিপোর্টার হিসেবে জামশেদ আলম অনিক ও ওমর ফারুক সহ অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার এজাহার নিজেকে জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ইউপি সদস্য উল্লেখ করে তাকে সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রহিম উল্ল্যাহ। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,গত ৪ এপ্রিল দৈনিক ফেনীর সাংবাদিক তারেক চৌধুরী কিছু কথা বলার জন্য রহিম উল্ল্যাহর কাছে সময় চান। ১৮ এপ্রিল চারজন সাংবাদিক দৈনিক ফেনী ও ঢাকা পোস্টের লোগো সম্বলিত বুম (মাইক্রোফোন)নিয়ে বাদীর ফার্নিচার দোকানে প্রবেশ করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে প্রশ্ন করেন। তারা রহিম উল্ল্যাহর কাছে ঢাকা পোস্ট ও দৈনিক ফেনীর সাংবাদিক তারেক চৌধুরীকে খুশি করার জন্য ও সংবাদ প্রকাশ না করতে ৫ লাখ টাকা চাঁদা প্রদান করবে বলে। প্রকাশিত সংবাদের কারণে তার এক কোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।এদিকে মামলার এজাহারে বাদী রহিম উল্ল্যাহর কাছে মুঠোফোনে তারেক চৌধুরী ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার কথা বলা হলেও এই ঘটনায় দৈনিক ফেনীর কোনো প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে যায়নি বলে জানান দৈনিক ফেনী সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী ও সংবাদটির প্রতিবেদক তারেক চৌধুরী।এই ব্যাপারে দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি তারেক চৌধুরী বলেন,এটি অনুসন্ধানী সংবাদ।স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মুঠোফোনে রহিম উল্ল্যাহর বক্তব্য নিয়েছি। এতে তিনি সবকিছুর দায় স্বীকার করে এসব কর্মকাণ্ড তার পেশা হিসেবে মন্তব্য করেন।প্রতিবেদনে সেটিই লেখা হয়েছে। এছাড়া তিনি যদি অভিযোগ অস্বীকার করতেন তখন সেটিই লেখা হতো ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সম্পূর্ণ কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। পাশাপাশি দৈনিক ফেনীর ফেসবুক পেইজেও এটি প্রকাশিত হয়েছে।সেখানে কোথাও চাঁদা দাবি কিংবা সংবাদের বিষয়ের বাইরে কোনো কথা হয়নি।তিনি এজাহারে যা উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও কাল্পনিক। দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, এই ঘটনায় দৈনিক ফেনীর কোনো প্রতিবেদক রহিম উল্ল্যাহর সঙ্গে দেখা করেননি কিংবা তার দোকানেও যাননি।যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে এবং যিনি নিজের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি নিজেই এসব কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,মামলা করে দৈনিক ফেনীর কর্মস্পৃহায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না,পারেনি।দৈনিক ফেনী কারো পক্ষে কিংবা বিপক্ষে সংবাদ করে না,সত্য তথ্যে সংবাদ করে,আগামীতেও করে যাবে।এর আগে গত মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল সীমান্তে চোরাচালানে সাম্রাজ্যে ইউপি সদস্য,বললেন ব্যবসা করি এই শিরোনামে ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নে মাদক কারবার,চোরাচালান ও মানব পাচার চক্র নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ফেনী ও ঢাকা পোস্ট।এতে উঠে আসে ফুলগাজী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বিএনপি কর্মী রহিম উল্ল্যাহসহ বেশ কয়েকজনের নাম,যারা সীমান্তে এসব অবৈধ কারবারে জড়িত। মামলায় ঢাকা পোস্ট ও দুই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করলেও বাস্তবে এই নামে ঢাকা পোস্টে কেউ নেই বলে জানান ঢাকা পোস্টের মফস্বল বিভাগের ইনচার্জ রুহুল আমিন রয়েল।