শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
একদিন আগের রেকর্ড ভেঙে এই শীতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে; যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন।
অর্থাৎ এই জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেঁতুলিয়ায় এই মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা আপাতত আর কমার সম্ভাবনা নেই সেখানে।“
আগামী দুইদিন দেশজুড়ে দিন-রাতের তাপমাত্রা বাড়ার আভাস দিয়ে শাহীনুল বলেন, “এরপর আবার তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।”
আগের দিন তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
কোনো অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তবে সেই স্থানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; আর ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়।
পানি ধরলে হাত যেন অবশ হয়ে যায়
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উত্তরের হিমেল হাওয়া বেড়ে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে। তাই বেড়েছে শীতের দাপটও। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।”
হাড় কাঁপানো শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার মানুষরা। রাত বাড়তে থাকলে কুয়াশা ঘন হতে থাকে। সকাল হলেও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে পরিবেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও বিকালের পর থেকে ফের বাড়ছে শীত।
শুক্রবার সকালে শহর ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। শীত থেকে বাঁচতে অনেককেই সড়কের পাশে খড়কুটো জ্বালাতে দেখা গেছে।
ঘনকুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও সড়কে গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।
শহরের ব্যবসায়ী মতি মিয়া বলেন, “আজকে ভাই ঠাণ্ডাটা বেশি মনে হচ্ছে। আমরা তো তাপমাত্রা কত তা জানি না। কিন্তু সারারাত এতো ঠাণ্ডা পড়ছে যে লেপ আর কম্বল একসঙ্গে নিলেও শীত কমাতে পারিনি। মনে হয় তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রিতে নামছে।”
জেলার বোদা পৌর এলাকার সাতখামার গ্রামের মজিনা বেগম বলেন, “প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রাতে বিছানা থেকে সব জিনিসপত্র বরফ হয়ে ওঠে। ঘরের মেঝেতে খালি পায়ে পা দেওয়া যায় না। ঘরে রাখা পানি বরফের মত হয়ে থাকে।
“পানি ধরলে হাত যেন অবশ হয়ে যায়। ঠাণ্ডা বাতাসে কাবু করে তুলেছে আমাদের। সন্ধ্যার পর বাড়ির উঠানে খড়কুটো জ্বালায় শীত তাড়াই।“”
এদিকে শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্কদের ভিড় বাড়ছে।
১০ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ
দেশের ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জেলাগুলো হল-রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, মৌলভীবাজার।
অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, এসব এলাকায় বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এছাড়া, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর, অন্যান্য স্থানে প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারদেশের কোথাও-কোথাও মাঝারি থেকে হালকা কুয়াশা পড়তে পারে।
এই সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে; ২৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।