রবিবার , ৫ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ-অনিয়ম
  2. অর্থ-বাণিজ্য
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আলোচিত
  5. কক্সবাজার
  6. খেলা
  7. জাতীয়
  8. জীবনযাপন
  9. ধর্ম
  10. নোটিশ-বিজ্ঞপ্তি
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. বৃহত্তর চট্রগ্রাম
  13. মুক্তমত
  14. রাজনীতি
  15. লাইফস্টাইল

কক্সবাজারে দেশের প্রথম অনলাইন বাস টার্মিনাল : সড়কে বেড়েছে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা

প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক..
জানুয়ারি ৫, ২০২৫ ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে জেলা পুলিশের উদ্যোগে চালু করা দেশের প্রথম ‘অনলাইন বাস টার্মিনাল’ নামের বিশেষ সাইটের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বেড়েছে। অনলাইন মাধ্যমটি ব্যবহারে করে ডিসেম্বর এক মাসে প্রায় ২ হাজার বাস পাকিং সুুবিধা গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে টিকেট বুকিং সহ অন্যান্য সেবা নিয়েছেন এক লাখের বেশি মানুষ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এবং  অনলাইন মাধ্যমটি তৈরি উদ্যোগ গ্রহণকারি মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর জুড়ে কক্সবাজারের পর্যটকের ভীড় ছিল অনেক বেশি। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ট্রাভেল গ্রুপ, কর্পোরেট গ্রুপের রিজার্ভ বাস নিয়ে আগত পর্যটকরা ‘অনলাইন বাস টার্মিনাল’ এ আবেদনের মাধ্যমে অনুমতি সাপেক্ষে সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ডিসেম্বর মাসে এই অনলাইন সিস্টেমে প্রায় ২ হাজার আবেদন গৃহীত হয়েছে। যদিও আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩ হাজারের বেশি।
তিনি বলেন, অনলাইনে অনুমতি গ্রহণের কয়েকটি শর্তের অন্যতম দুটি শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি যাত্রী নামানোর সাথে সাথে বাস পার্কিং এ চলে যেতে হবে। অপিরটি হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস জোনে বাস পার্কিং করা যাবে না। অনলাইন আবেদন ফর্মে আবেদনকারীকে পার্কিং এর স্থান সিলেকশন করতে হয়। আবেদন অনুমোদিত হলে আবেদনকারী মোবাইলে নোটিফিকেশন মেসেজ চলে যায়। উক্ত নোটিফিকেশন মেসেজে আবেদন নম্বরসহ পার্কিং স্থানের নাম উল্লেখ থাকে। আবেদন গৃহীত না হলেও আবেদনকারীর মোবাইলে গৃহীত না হওয়ার কারণ উল্লেখসহ নোটিফিকেশন মেসেজ যায়। আবেদন গৃহীত না হওয়ার কারণ গুলো হল- বাসের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার অসম্পূর্ণ বা ভুল প্রদান, ভুল পার্কিং সিলেকশন, পর্যটন এলাকায় যানজট নিরসন ও অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান ইত্যাদি।
#যেভাবে সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বেড়েছে :
এই বিশেষ সাইটের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত সড়ক ও যানবাহনের ত্রুটি এবং চালকের গাফলতি দায়ী। এই তিনটি প্রধান কারণের মধ্যে চালকের দায় সবচেয়ে বেশি। অনলাইন বাস টার্মিনাল সিস্টেমে রয়েছে যানবাহনের মালিক ও চালকদের তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থা। উক্ত ডাটাবেসে রয়েছে কক্সবাজারে জেলায় চলাচলরত লোকাল ও আন্তঃজেলা ১২০টি বাস পরিবহনের প্রায় ১৪০০টি বাসের ফিটনেস ও রুট পারমিটের হালনাগাদ তথ্যসহ বিস্তারিত তথ্য, সকল চালক ও গাইডের ছবি ও ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য। বাস শিডিউলে বাসের রেজিস্ট্রেশন নাম্বারসহ উক্ত বাসের চালক ও গাইডের তথ্য প্রদান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীরা বাসে বসেই পরিবহনের সার্ভিস ও চালকের আচরণ, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে রেটিং, রিভিউ ও মন্তব্য করতে পারবে। এমনকি অভিযোগ জানাতে পারবে। উক্ত অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী ট্রাফিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট পরিবহন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে। যাত্রীদের প্রদত্ত রেটিং ও রিভিউ’র উপর ভিত্তি করে উক্ত পরিবহনের সামগ্রিক রেটিং নির্ধারণ করার বন্দোবস্ত রয়েছে অনলাইন বাস টার্মিনালে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সেবাটিতে অনেকে যাত্রী চালকের ফোনে কথা বলা, অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো সহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে। আর অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ওই গাড়িতে থাকা চালক বা সহকারিদের সাথে ট্রাফিক বা বাস মালিকদের পক্ষে যোগাযোগ করে সর্তক করা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। একই চালকের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ আসছে মালিক পক্ষ বা ট্রাফিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ডিসেম্বর বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসলে তীব্র যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বাস বা অন্যান্য গাড়ির জন্য পাকিং স্থান নির্ধারণ এবং যাত্রীবাহি বাস গুলো নির্ধারিত স্থানে আটকে দেয়ায় শৃঙ্খলা রক্ষা করা গেছে।
পুলিশের পক্ষে দেশের প্রথম এই অনলাইন সেবাটি আরও উন্নত করে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর কথা জানান তিনি।
www.obtcoxsbazar.com নামের এই অনলাইন মধ্যমটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা দেয়া হয়েছে। যেখানে কক্সবাজার থেকে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় যাওয়া সকল বাসের তথ্য, টিকেটের মূল্য, কাউন্টারের ঠিকানা, অনলাইনে টিকেট ক্রয়ের সুবিধাও রয়েছে। নিবন্ধিত প্রতিটি গাড়ি রয়েছে কিউআর সহ একটি পোষ্টারও।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার  মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, অনলাইন বাস টার্মিনাল নামের এই ওয়েব ঠিকানা ব্যবহার করে পর্যটকসহ যে কোনো যাত্রী দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নিজের পছন্দ মতো বাস, টিকেট সংগ্রহ করে নির্বিঘ্নে যাতায়ত করতে পারবেন। পাশাপাশি বাসের ফিটনেসসহ চালকদের তদারকি এবং মালিকদের জবাবদিহি নিশ্চিত ও মাঝ পথে কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার হলে প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই বাস ও  ড্রাইভার সাথে সাথে সনাক্ত করা যাবে। মূলত জেলার পরিবহন খাত ও ট্রাফিক বিভাগে শৃংখলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের এ উদ্যোগ মন্তব্য করে তিনি বলেন, জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ পর্যটন নগরীতে বাস পরিবহন সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই ‘ডিজিটাল বাস ব্যবস্থাপনার’ উদ্যোগ নিয়েছে।
#সেবা গ্রহণকারি যাত্রী সহ চালকরা যা বলছেন :
ডিসেম্বর মাস জুড়ে পর্যটকের ভীড়ে ঢাকা সহ অন্যান্য জেলার যাত্রীরা টিকেট সহ কাউন্টার চিহ্নিত করতে সেবা গ্রহণ করেছেন এই মাধ্যমটিতে।
রাজধানীর ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি রাশেদুল ইসলাম জানান, অনলাইন মাধ্যমটি তথ্য পেয়েছিলাম হোটেলের এক কর্মচারির কাছে। ঢাকা ফিরতে টিকেট পাওয়ার জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ওখানে প্রবেশ করে দেখি কত টায়, কোন কাউন্টার থেকে কোন বাস যাবে লেখা আছে। একই সঙ্গে টিকেটের মূল্য এবং কোন বাসে কয়টি টিকেট খালি আছে তা বলা আছে। কাউন্টার ঠিকানাটি কাছেই ছিল। টিকেট নিতে সুবিধা হয়েছে। এই উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কারণ আগে আমাদের ভোগান্তি হতো। অনেকদূর হেঁটে গিয়ে টিকিট করতে হতো।
কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে আসা পর্যটক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করার জন্য জেলা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনলাইন বাস টার্মিনাল সেবা চালু করা হাজার হাজার পর্যটক যাত্রী ভোগান্তি থেকে রেহায় পেয়েছে। আমার পরিবারের সবাই এখন থেকে ওই ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কেটে যাতায়াত করবো।
বাস রিজার্ভ নিয়ে আসা ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক রফিকুল আনোয়ার জানান, ৪০ জনের গ্রুপ নিয়ে যে আবাসিক হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে ছিলেন ওটাকে পাকিং ছিল না। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনলাইনে আবেদন করে পার্কিং সুবিধাটি নিয়ে ছিল ফ্রিতে। কোন জটিলতা হয়নি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা।

সর্বশেষ - বিশেষ সংবাদ