ইসরায়েলের কাছে ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনার কথা কংগ্রেসকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। দেশটির একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
অস্ত্রের এ চালান পাঠাতে হাউজ ও সেনেট কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এ চালানে থাকবে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সমরাস্ত্র।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউজ ছাড়ার দু সপ্তাহ আগে এমন পরিকল্পনার কথা জানানো হলো।
গাজায় বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিহত হবার কারণে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেবার যে আহবান সেটি ওয়াশিংটন প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্র দুই হাজার কোটি ডলার ফাইটার জেট ও অন্য সামরিক উপকরণ ইসরায়েলের কাছে বিক্রির একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন করেছিলো।
কর্মকর্তারা বলছেন, সবশেষ যেসব অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে আকাশ থেকে আকাশে উৎক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র, আর্টিলারি গোলা এবং বোমা।
এসব বিক্রির সাথে জড়িত একটি সূত্র বিবিসিকে শনিবার জানিয়েছে: “প্রেসিডেন্ট এটা পরিষ্কার করেছেন যে আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে ইসরায়েলের নাগরিকদের আত্মরক্ষা এবং ইরান ও তার প্রক্সিদের আগ্রাসন প্রতিরোধের অধিকার আছে।”
“ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা সরবরাহ আমরা অব্যাহত রাখবো”।
জো বাইডেন প্রায়শই ইসরায়েলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে ‘অবিচ্ছেদ্য’ আখ্যায়িত করে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। এছাড়া দেশটি ইসরায়েলকে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সামরিক উপকরণ বানাতে সহায়তা করছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এসআইপিআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল সময়ের মধ্যে ইসরায়েল যত অস্ত্র আমদানি করেছে তার ৬৯ ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র দুই হাজার পাউন্ড ও পাঁচশ পাউন্ড ওজনের বোমার একটি চালান স্থগিত করেছিলো।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে ইসরায়েলের স্থল অভিযানের উদ্বেগ থেকে তখন এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছিলো দেশটি।
এতে ওয়াশিংটনের রিপাবলিকানরা তীব্র সমালোচনায় নেমে পড়েছিলো। পাশাপাশি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার’ সাথে তুলনা করেছিলেন।
এরপর বাইডেন স্থগিতাদেশ আংশিক প্রত্যাহার করে নেন।
এবার যে চালান পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক সময়ের অনেকগুলো পদক্ষেপের একটি।
তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে সম্ভবত এটাই ইসরায়েলের কাছে শেষ অস্ত্র বিক্রি। আগামী বিশে জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি এর আগে বিদেশে সংঘাত বন্ধের কথা জোর দিয়ে বলেছেন। এমনকি নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি কমিয়ে আনার কথা বলেছেন।
ট্রাম্প নিজেকে ইসরায়েলের একজন কট্টর সমর্থক হিসেবে বলে থাকেন। তবে তিনি ইসরায়েলকে গাজার সামরিক অভিযান দ্রুত শেষ করার আহবান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল সামরিক বাহিনী।
২০২৩ সালের সাতই অক্টোবরে ওই হামলায় ১২শ মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিলো।
এরপর গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে ৪৫ হাজার ৫৮০ জন মারা গেছে বলে সেখানকার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।