আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত সমাবেশে দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “জনজীবনের সংকট নিরসন, জান-মালের নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনিনির্ষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন।”
সিপিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিবি সভাপতি।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
এই আন্দোলনকে অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান হিসেবে তুলে ধরে সমাবেশে সিপিবি নেতারা বলেছেন, এর চেতনায় দেশ ও মানুষের মুক্তি অর্জন করতে হলে ‘ব্যবস্থা’ বদল করতে হবে। এজন্য ‘সামাজিক বিপ্লব’ সংগঠিত করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সংস্কার ও নির্বাচন কোনটা আগে হবে, তাই নিয়ে বিতর্ক চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়টিকে এগিয়ে রাখছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথাও বলছে।
সিপিবি সভাপতি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি, প্রশাসনে অস্থিরতা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক।”
তিনি বলেন, “দেশে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশ ও জাতির জন্য এটি শুভ লক্ষণ নয়। এই গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকেও বিতর্কিত করে তুলেছে।
“এই গোষ্ঠী ৭২ এর সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বলছে। তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খেলা করতে চাচ্ছে। তাদের এই খেলা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।”
বিরাজমান এসব সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সিপিবি সভাপতি।
দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “বাজার ব্যবস্থায় এখনো হাতে দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। পতিত স্বৈরাচার ও অপশক্তি থেকে আমাদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। ভারত বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। তাই তারা তাদের লোক ক্ষমতায় বসাতে চায়।”
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা চেয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারের কথা শব্দ চয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয় সুনির্দিষ্ট করুন।
“অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে যেন না পারে সেজন্য দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।”
আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক।
সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ দৃশ্যমান করার দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে ২০ থেকে ২৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সিপিবি।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সিপিবি নেতা ক্ষেতমজুর আন্দোলনের সংগঠক প্রদীপ ভৌমিকের সন্তান সুজন ভৌমিক।
সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ সমাবেশ পরিচালনা করেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলসহ কয়েকটি বামপন্থি দলের নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন।